প্রথম পর্ব : আমার শহর
একটা শহর একটা মানুষের মতো হয়
সে জন্ম নেয় বড় হয়
আবার ম্যাচিওর হয়।
অনেক সময় কাজের সূত্রে বাইরে থাকার জন্যে
খুব নিকট আত্মীয় কোনোও বাচ্চার
বড় হয়ে ওঠা আমরা দেখতে পাই না,
তখন হঠাৎ করে তার সাথে দেখা হলে
তাকে অচেনা লাগে
আবার সেই বাচ্চাও চিনতে পারে না
কাছে গেলে দূরে সরে যায়
আমার কাছে আমার শহরটাও ঠিক তেমনি
একেবারে অচেনা হয়ে বেড়ে উঠেছে
অথচ যে শহরের অলি গলি পাকস্থলী
সব কিছু একসময় নখদর্পণে ছিল
এখন কিছুই আর চেনা যায় না
ছোট শহরের চেনা মুখগুলো হারিয়ে গেছে
অথবা চেনা মুখ গুলো বদলে গেছে
বড় হয়ে ওঠার তাগিদে
মাঝে মাঝে দুই একটা উঁকি দেয়
এদিক ওদিক থেকে
ভালো লাগে ভরসা জোগায়
আবার ফিরে আসার
এই শহরের বুকে
নাড়ির টানে।
দ্বিতীয় পর্ব : আমার বাড়ি
বাড়ির ছাদটা আমার খুব প্রিয় ছিল
বাড়ির ভেতর বারান্দা, আমার ঘর, আর ছাদ।
আমার জীবনের কাটানো একান্ত আপন,
একাকী কিছু মুহূর্ত।
খুব গরমে ছাদে যেতে না পেরে
সিঁড়িতে বসেই আকাশ পাতাল ভাবতাম
কত দূরের ভবিষ্যৎ ভাবতাম
তার কোনো ইয়ত্তা নেই
ছাদের ওপর আর একটা ছোট ছাদ
মই বেয়ে উঠে যেতাম সটান
সেখানে জল ট্যাংকের নিচে ছায়াতে
জমিয়ে রাখতাম ছেলেবেলার গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।
বাড়ির কালো সিমেন্টের ডেড ছিল ব্ল্যাক বোর্ড
সারাদিন চক দিয়ে আঁকি বুঁকি কাটতাম
আর আঁকতাম টাইলসের গায়ে
জলরঙ ছলছলে তলে
খেলে বেড়াতো তেলের মতো।
এমন হাজার স্মৃতি ভিড় করে আসে মনের মধ্যে
মাথার মধ্যে যেন উল্কার মতো বৃষ্টি হয়ে নামে
থামানো যায় না তাকে।
চোখের পাতা এক হলে
স্বপ্ন হয়ে ভিড় করে ঘুমের মাঝে।
সকাল বেলা ভরসা জোগায়,
আবার ফিরে আসার,
এই বৃদ্ধ বাড়ির বুকে
নাড়ির টানে।
তৃতীয় পর্ব: আমি
একটা ছোট্ট ছেলে কত স্বপ্ন বুকে
জন্ম থেকে বেড়ে ওঠে একা।
ছোট্ট থেকে একা
বাঁচে কল্পনাতে, নিজের জগতে।
সেই জগৎ থেকে বেরিয়ে
সে আজ সারা পৃথিবীকে আপন করতে চলেছে
ভয়, দুঃখ, আবার হারানোর দুঃখ
মনের মধ্যে কালো ঘন মেঘের মতো
অন্ধকার করে রেখেছে।
একটা ছোট্ট শহরের ছেলে
বড় শহরে এসেছে একা
যুদ্ধ করেছে একা
অচেনাকে চেনা করে তুলেছে
নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে
আজ সে আরও বড় হয়েছে
আজ সে পারি দিচ্ছে এদেশ থেকে ওদেশ
কত নতুন মানুষ চিনছে
শিখছে আদব কায়দা
নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে
কিন্তু সে মাতৃভাষা ভোলেনি
ভোলেনি তার জন্মস্থান
ভোলেনি তার শেকড় কোথায়
ভোলেনি নিজের মাটির গন্ধ
মাঝে মাঝে সব কিছু ছাপিয়ে
উঠে আসে চোখের সামনে তার।
কিন্তু ঘরকুনো ছেলেটি আজ যাযাবর
সারাজীবন যাযাবরই থাকবে সে
হয়তো ফিরবে কোনো এক দিন
সেই সবুজ মাঠের ধারে
ফলগু নদীর তীরে
সাইকেলে ধুলো উড়িয়ে
নাড়ির টানে।
রঘুনাথগঞ্জ, ০৫/০৫/২০২৪, দুপুর ০৩:১৭